অনলাইনে আয় করার ৫ টি নির্ভরযোগ্য উপায়
অনলাইনে আয় করার ৫ টি নির্ভরযোগ্য উপায়
অনলাইনে আয় করা সম্ভব এটি হয়তো আপনারা সকলেই জানেন। কিন্তু আপনাদের ভেতর অনেকের এটা জানা নেই যে কি কি উপায়ে অনলাইনে আয় করা সম্ভব। অনলাইনে নিশ্চিত আয় করতে কিছু নির্ভরযোগ্য উপায়, কিভাবে আপনিও অনলাইন থেকে প্রচুর পরিমানে আয় করতে পারবেন নিচে বিস্তারিত।
অনলাইনে আয় করুন আর অফলাইনে আয় করুন, এমন কোনো টেকনিক এখনো আবিষ্কার হয়নি যে আপনি রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাবেন। আপনি ঘুম থেকে উঠলেন আর কোটিপতি হয়ে গেলেন। বন্ধুরা এমনটা শুধু লটারির ক্ষেত্রে হতে পারে। তাছাড়া আপনি যে কোনো আয়ের কথাই বলুন না কেনো তা শুধু মাত্র পরিশ্রমেই হতে পারে। আপনি যতো বেশি শ্রম দেবেন ততো বেশি আয় করতে পারবেন। তাই সবচেয়ে প্রথমে মাথা থেকে এই কথা ঝেড়ে ফেলুন যে আজ আপনি অনলাইনে আয় করতে শুরু করলেন আর ১০ দিনের ভেতর লক্ষ্ লক্ষ্ টাকা চলে আসলো। হাঁ, একদিন এমন আসবে যে আপনি অনলাইন থেকে লক্ষ্ লক্ষ্ টাকা উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিশ্রম, ফ্রেস আইডিয়া, সময় এবং দক্ষতা।
তাই এক কথায় বলতে গেলে বলবো যে, আপনি যদি পরিশ্রম করতে পারেন, অনেক সময় দিতে পারেন এবং ধর্য ধারন করতে পারেন তবেই অনলাইনে আয় করার কথা চিন্তা করবেন। তা না হলে শুধু আপনার সময় নষ্ট হতে পারে।
ইউটিউব থেকে খুব ভালো পরিমানে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। অনলাইনে আয় করার জন্য ইউটিউব দিনের পর দিন অনেক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অনেক মানুষ ইউটিউব থেকে অনেক পরিমানে অর্থ উপার্জন করছে, এবং আপনিও চাইলে করতে পারেন। আপনার কাছে যদি একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল থাকে এবং তাতে যদি হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকে এবং আপনার বানানো ভিডিওতে যদি অনেক ভালো ভিউ হয়ে থাকে তবে ইউটিউব থেকে আপনি ভালো পরিমানে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এখন ইউটিউব কি, এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি না। কেনোনা এই বিষয় নিয়ে এমন কাওকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না যে তিনি ইউটিউব চেনেন না।
আপনি যখন ইউটিউবে কোনো ভিডিও আপলোড করবেন তখন আপনার ভিডিওটির সাথে অ্যাড দেখানো হবে। এই অ্যাড দেখায় গুগল এর আরেকটি সেবা গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে। ইউটিউব থেকে আপনাকে অ্যাড এর জন্য গুগল অ্যাডসেন্স এর কাছে আবেদন করতে হবে। তবে চিন্তা করবেন না। আপনার দরখাস্তটি খুব তাড়াতাড়ি মঞ্জুর হয়ে যাবে, এবং আপনার আপলোড করা ভিডিওটিতে অ্যাড দেখাতে শুরু হয়ে যাবে। গুগল অ্যাডসেন্স এ অনেক অ্যাড প্রদানকারী কোম্পানি আছে। যারা গুগলকে অর্থ প্রদান করে থাকে। গুগল সেই অর্থ থেকে কিছু শতাংশ আপনাকে প্রদান করবে এবং বাকিটা গুগল নিজের কাছে রেখে দেয়।
অনলাইনে আয় করার জন্য ইউটিউব খুব ভালো একটি মাধ্যম। কিন্তু এটি তখনই আপনার জন্য ভালো হবে যখন আপনার কাছে কোনো বড় চ্যানেল থাকবে। যেখানে অনেক সাবস্ক্রাইবার থাকবে এবং আপনার তৈরি করা ভিডিও অনেকে পছন্দ করবে। এখন বড় চ্যানেল এবং অনেক সাবস্ক্রাইবার তৈরি করতে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে, অনেক সময় ব্যয় করতে হবে এবং আপনার কাজে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। আপনি যদি অনেক ভালো ভিডিও তৈরি করতে পারেন, আপনার আইডিয়া গোটা বিশ্বকে দেখাতে চান, যদি ভালো উপস্থাপনা করতে এবং ভিডিও এডিট করতে পারেন তবে ইউটিউব আপনার জন্য অর্থ উপার্জনের একটি ভালো মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।
আপনি যে কোনো ধরনের ভিডিও তৈরি করতে পারেন। সেটা কোনো টিউটোরিয়াল হোক বা টেকনোলজি বিষয়ে হোক কিংবা রান্নার অনুষ্ঠান হোক। আপনি যেকোনো ধরনের ভিডিও বানান যা আপনি বানাতে পছন্দ করবেন। দুনিয়াকে দেখান সেই ভিডিও গুলো। যদি ভিডিও গুলো ভালো হয়ে থাকে তবে মানুষ তা পছন্দ করবে এবং আপনার চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করবে। অনেকে আপনার ভিডিওটি দেখবে এবং আপনি ধিরেধিরে অনেক উপার্জন করতে পারবেন।
অনলাইনে আয় করার আরেকটি নির্ভরযোগ্য স্থান হলো ওয়েবসাইট বা ব্লগ। আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট কিংবা একটি ব্লগ থাকে, এবং আপনার ওয়েবসাইট কিংবা ব্লগে যদি যথেষ্ট পরিমানে ভিসিটর থাকে তবে আপনি অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। দেখুন ওয়েবসাইট বা ব্লগ থাকা এবং তার সাথে যথেষ্ট পরিমানে ভিসিটর থাকলে বহুত পন্থা আছে আয় করার জন্য। তবে আয় এর মাধ্যম হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ গুগল অ্যাডসেন্স।
গুগল অ্যাডসেন্স এর কথা তো আগেই বললাম। এটি একটি অ্যাড পাবলিশিং কোম্পানি। আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট এর কনটেন্ট অ্যাডসেন্স এর সাথে মনিটর করাতে পারবেন। অ্যাড থেকে উপার্জিত অর্থের এক শতাংশ গুগল আপনার সাথে শেয়ার করবে। কিন্তু আপনার প্রয়োজন পড়বে অসাধারন কিছু কনটেন্ট এর। আপনার কনটেন্ট যতো বেশি মানুষ পছন্দ করবে এবং ভিউ হবে আপনি অ্যাড থেকে ততো বেশি উপার্জন করতে পারবেন।
গুগল অ্যাডসেন্স ছাড়াও আরো অনেক অ্যাড পাবলিশিং কোম্পানি আছে। যারা অনেক ভালো রেট দিয়ে থাকে। আপনি চাইলে অন্যান্য অ্যাড পাবলিশিং কোম্পানির অ্যাড ব্যবহার করেও ভালো উপার্জন করতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইটে যেকোনো প্রোডাক্ট প্রচার করেও আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তাছাড়াও ওয়েবসাইট বা ব্লগ থেকে অর্থ উপার্জন এর আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। নিচে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
তাই দেরি না করে আপনার নিজের একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করে ফেলুন। তারপর দুনিয়ার সাথে শেয়ার করুন আপনার পোস্ট বা কনটেন্ট গুলো। আজকাল মাত্র এক হাজার টাকা দিয়েও ওয়েবসাইট বানানো যায়। খুব বেশি হলে ২-৩ হাজার টাকা খরচ পড়তে পারে। আপনি যদি নিজে বানাতে পারেন তবে বানিয়ে ফেলতে পারেন অথবা কারো কাছ থেকে বনিয়ে নিতে পারেন। আপনি চাইলে গুগল এর ব্লগার সেবাটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রী। ব্লগার দিয়ে ব্লগ তৈরি করে ব্লগিং করতে থাকুন, অনেক ভালো ভালো অনন্য কনটেন্ট তৈরি করুন। তারপর সেখানেও আপনি গুগল অ্যাডসেন্স লিঙ্ক করতে পারবেন এবং অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
অনলাইনে যতো শপিং সাইট আছে যেমন অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট বা স্নাপডিল এদের সকলের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সুবিধা থাকে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এমন একটি ব্যাবস্থা যেখানে আপনি কোনো প্রোডাক্ট কেনার জন্য আপনার বন্ধু বা পরিবারের কেউ বা আপনার সাইট এর ভিসিটরদের আমন্ত্রন জানাতে পারেন। তারা যদি আমন্ত্রন গ্রহন করে আপনার রেফার করা প্রোডাক্ট টি ক্রয় করেন তবে সেখান থেকে আপনি কিছু অংশ উপার্জন করতে পারবেন।
তো এটি নিঃসন্দেহে অনলাইনে উপার্জন করার ভালো একটি উপায়। আপনি অ্যামাজন এর একজন অ্যাফিলিয়েট মেম্বার হয়ে যেতে পারেন। তারপর আপনি ইচ্ছা মতো প্রোডাক্ট পছন্দ করতে পারবেন, সেখান থেকে আপনাকে লিঙ্ক দেওয়া হবে। আপনার সেই লিঙ্কটি আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেল বা ওয়েবসাইট বা ব্লগ বা ফেসবুক এ শেয়ার করতে পারেন। সেই লিঙ্কটি ক্লিক করে যদি কোনো ক্রেতা সেই প্রোডাক্ট টি ক্রয় করেন তবে আপনি সেখান থেকে তার কমিসন পেয়ে যাবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি বই, মোবাইল ফোন, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছুই রেফার করতে পারবেন। আপনার কাছে যদি পাবলিসিটি করার জন্য ভালো কোনো প্লাটফরম থাকে, সেটা আপনার ইউটিউব চ্যানেল হোক বা আপনার ওয়েবসাইট হোক কিংবা আপনার ফেসবুক পেজ হোক। তাহলে সেই প্লাটফরম এর মাধ্যমে আপনার অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করে এবং প্রোডাক্ট বিক্রি করিয়ে আপনি খুব ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
Fiverr এমন একটি সাইট যেখানে আপনি যেকোনো সেবা প্রদান করতে পারবেন যদি সেই সেবাটি অনলাইন এর মাধ্যমে করো কাছে পৌঁছান সম্ভব হয়। যেমনঃ ওয়েবসাইট ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট কিংবা ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি। আপনি যদি এই ধরনের কোনো কাজ এ পারদর্শী হয়ে থাকেন তবে Fiverr.Com এ একটি অ্যাকাউন্ট করতে পারেন। সেখানে আপনি আপনার এই কাজ গুলোকে বিক্রি করতে পারবেন।
সবচেয়ে সুবিধার কথা হলো এখানে প্রতিটি কাজ এর দাম মিনিমাম ৫ ডলার হয়ে থাকে। তাছাড়া আপনি আপানার কাজ এর নিয়ম অনুসারে বিভিন্ন প্যাকেজ বানাতে পারবেন। এবং সেগুলোর জন্য আলাদা আলাদা দাম নির্ধারণ করতে পারবেন। যখন কাস্টমার আসবে এবং তার কাজের জন্য আপনার কাছে রিকুয়েস্ট করবে। আপনি তাকে কাজ বুঝে দেবেন ২-৩ দিন এর ভেতর। তখন সেখান থেকে Fiverr সামান্য কিছু টাকা কেটে নিয়ে প্রায় পুরো টাকাই আপনাকে দিয়ে দেবে।
তাছাড়াও অনলাইনে অনেক নির্ভরযোগ্য ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস আছে। যেমনঃ ফ্রীলান্সার, আপওয়ার্ক ইত্যাদি। আপনি সেই ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলে একটি প্রোফাইল বানাতে পারেন। তারপর আপনাকে মার্কেটপ্লেস এ প্রাপ্ত হাজার হাজার জব এর ভেতর থেকে আপনার পছন্দের জব বা আপনি যে কাজ গুলো করতে পারবেন তার উপর আবেদন করতে হবে। জব প্রদানকারী আপনার প্রোফাইল যাচাই করে আপনাকে ভালো লাগলে সেই জবটি দিয়ে দিতে পারেন। ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস এ আপনি ঘণ্টা চুক্তি এবং ফিক্সড প্রাইস এর জব করতে পারবেন। এবং সেখান থেকে অনেক ভালো পরিমানে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
এই পোস্ট এ মাত্র ৫ টি নির্ভরযোগ্য উপায় বলেছি অনলাইনে আয় করার জন্য। কিন্তু এখনো অনেক উপায় আছে যার মাধ্যমে আপনি সন্তুষ্টজনক আয় করতে পারবেন। লিঙ্ক সর্ট করে অনলাইনে আয় করার ব্যাপারে। লক্ষ্য করে দেখবেন যে বিভিন্ন যায়গায় ইউজার রা লিঙ্ক সর্ট করে পোস্ট করে। লিঙ্ক সর্ট করার মাধ্যমে আপনি বড় বড় ওয়েবসাইট লিঙ্ক কে ছোট করতে পারবেন। তো এই লিঙ্ক সর্ট করার জন্য অনেক ওয়েবসাইট এই সেবা প্রদান করে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম bit.ly এবং goo.gl। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করে আপনি উপার্জন করতে পারবেন না। ইন্টারনেট এ আরো কিছু ওয়েবসাইট আছে যেমন adf.ly বা sorte.st ইত্যাদি, এরা আপনাকে লিঙ্ক সর্ট করার জন্য টাকা প্রদান করবে।
যখন আপনি আপনার বড় লিঙ্ক গুলোকে এদের মাধ্যমে সর্ট করে বিভিন্ন যায়গায় শেয়ার করবেন তখন যদি কেও সে লিঙ্ক এ প্রবেশ করে তবে সে কাঙ্ক্ষিত লিঙ্ক এ যাবার আগে একটি অ্যাড পেজ দেখতে পাবে। এবং অ্যাড পেজ স্কিপ করে কাঙ্ক্ষিত লিঙ্ক এ যেতে পারবে। আর এর জন্য adf.ly বা sorte.st আপনাকে অর্থ প্রদান করবে।
যদি ফেসবুক এ কিছু পোস্ট করেন অথবা আপনার ওয়েবসাইট এ কিছু পোস্ট করেন তবে সেখানে লিঙ্ক সর্ট করে শেয়ার করতে পারেন। সে লিঙ্ক এ যতো বেশি ভিসিটর প্রবেশ করবেন আপনি ততো বেশি উপার্জন করতে পারবেন। তাছাড়াও অনলাইন এ অনেক ছোট ছোট কাজ আছে যার মাধ্যমে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
অনলাইনে আয় করার জন্য যে ৫ টি নির্ভরযোগ্য উপায় দেওয়া হয়েছে,আশা করি সকলের উপকারে আসবে। আপনি আপনার কাজ অনুসারে এবং পরিশ্রম অনুসারে এই উপায়গুলোর মাধ্যমে অনেক ভালো আয় করতে পারবেন। বাস্তব জীবন হোক আর অনলাইন হোক, অর্থ উপার্জন করা কোথাওই সহজ না। এছাড়াও অনলাইন থেকে আয় করার অনেক মাধ্যম আছে, কিন্তু সেগুলোর কিছু কিছু নির্ভরযোগ্য আবার কিছু কিছু কবে চলে যাবে বলা যায় না। তাই অনলাইনে এ কাজ করার ইচ্ছা থাকলে উপরিউক্ত কোনো নির্ভরযোগ্য বেঁছে
Comments
Post a Comment